ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলামকে অপসারণে বিএসইসিকে লিগ্যাল নোটিশ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১
  • 75

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : নানা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) রিয়াজ ইসলামকে দ্রুত অপসারনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাগরুব কবির। তার বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ড ও ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থে এই অপসারন চাওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৪ মার্চ) এলআর গ্লোবালের আমেরিকার শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিভাগের দায়িত্বে থাকা কমিশনার ড. মিজানুর রহমানের কাছে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

এর আগে রিয়াজ ইসলামের কর্মকান্ডে নাখোশ হয়ে তার অধীনে পরিচালিত ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও গ্রীণ ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড অন্য অ্যাসেট ম্যানেজারের কাছে হস্তান্তরে ইউনিটহোল্ডাররা সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও গ্রীণ ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটহোল্ডাররা আইনের মধ্য থেকেই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ থেকে রক্ষা পেতে রিয়াজ ইসলাম কয়েক দফায় খোড়াঁ যুক্তিতে মামলা করলেও আদালতে তা ধোপে টিকেনি। কিন্তু ফান্ড দুটির দায়িত্ব হস্তান্তরে বর্তমানে বাধাঁ হয়ে দাড়াঁয় কমিশন। শুরুতে বর্তমান কমিশনের এক কমিশনার রিয়াজ ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিলেও তিনি এখন বিপক্ষে। এখন রিয়াজ ইসলামের পক্ষে আরেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।

কমিশনের এই টানাপোড়েনের মধ্যে হতাশ হয়ে অবশেষে পিছু হটে ইউনিটহোল্ডাররা। তারা কমিশনকে জানিয়ে দেয়, আপনাদের যেটা ভালো মনে হয়, সেটাই করেন। আমরা আর এ নিয়ে ঝামেলার মধ্যে থাকতে চাই না।

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ৪৭.৭০ শতাংশের মালিক আমেরিকার প্রাইভেট বিনিয়োগকারী কোম্পানি এলআর ম্যানেজারস ইনভেস্টমেন্টস এলপি। বাকি ৫২.৩০ শতাংশের মালিক ও বর্তমান প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) রিয়াজ ইসলাম। এই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ৬টি ক্লোজড-এন্ড বা মেয়াদি ফান্ডের ১ হাজার ৫২ কোটি টাকার সম্পদ পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু রিয়াজ ইসলামের অনৈতিক বা অবৈধ কর্মকান্ডের কারনে কোম্পানিটি সমালোচনার মুখে।

রিয়াজ ইসলাম সিকিউরিটিজ আইন ছাড়াও অন্যান্য অনিয়ম করেছে। সে শুধুমাত্র সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ ভঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি ফান্ড আত্মসাৎ, অবৈধ বিনিয়োগ, মিথ্যা স্টেটমেন্ট দাখিল ও ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থবিরোধী অন্যান্য কার্যক্রম করে আসছেন। কিন্তু তারপরেও তার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে চিঠি দিয়ে কোন জবাব বা প্রতিকার পাওয়া যায়নি নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন…..
কাউকে তোয়াক্কা করছে না এলআর গ্লোবাল
এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলামের কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন বিদেশী মালিকরা

নোটিশে বলা হয়েছে, রিয়াজ ইসলাম ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে অননুমোদিত প্রাইভেট ইক্যুইটিজে বিনিয়োগ করেছে। এর মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ ভঙ্গ করা হয়েছে। এছাড়া ওই বিনিয়োগ মিথ্যা মূল্যায়িত (ভ্যালুয়েশন) তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এমনকি ট্রাস্টিও দুটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সঠিক মূল্য শূন্য বলে দাবি করেছে। তারপরেও এ জাতীয় অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কমিশন কোন হস্তক্ষেপ করছে না।

এই রিয়াজ ইসলাম অযোগ্য ও অবৈধ ব্যয়ের মাধ্যমে কোম্পানি পরিচালনা করছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ ভঙ্গ করেছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যয়ের বিষয়ে অনেক অভিযোগ উঠেছে। যদিও ৪৭.৭০ শতাংশ শেয়ারধারন করে কোন ধরনের লভ্যাংশ পাচ্ছে না আমেরিকার শেয়ারহোল্ডার। অথচ কোম্পানিটি থেকে প্রতিবছর লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে ৬ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ অনুযায়ি নিষিদ্ধ।

নোটিশে বলা হয়েছে, বিএসইসির তদন্ত কমিটিও রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ডকুমেন্টসের ভিত্তিতে অননুমোদিত প্রাইভেট ইক্যুইটিজে অবৈধ বিনিয়োগের প্রমাণ পেয়েছে। যে কমিটি গত বছরের ৩ নভেম্বর রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তারা রিয়াজ ইসলামের নেতৃত্বে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ১৭(এ) ও ১৮ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ এর ৩৩(৭) ও ৫৫ ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে ২৬ জুন বিএসইসি কোম্পানিটিকে একইধরনের অবৈধ কর্মকান্ডের জন্য ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। সে ওই সময় বিভিন্ন ফান্ডস থেকে প্রাইভেট ইক্যুইটিজে অবৈধ বিনিয়োগ, এক ফান্ড থেকে অন্য ফান্ডে অবৈধভাবে বিনিয়োগ এবং অতিরিক্ত অফিস ও প্রশাসনিক ব্যয় দেখিয়েছিল।

সরকার শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রন, এই বাজারের অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা, গুজব নিয়ন্ত্রন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ন্ত্রন এবং ইনসাইডার ট্রেডিং থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতে বিএসইসি গঠন করেছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা অনুযায়ি, শেয়ারবাজারের অবৈধ কর্মকান্ড শুধুমাত্র তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বের করাই বিএসইসির কাজ না, একইসঙ্গে বাজারের স্বার্থে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই যে কারো যেকোন ধরনের নিষিদ্ধ কাজের ক্ষেত্রে বিএসইসির পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কমিশন মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইনের ৩১(৩) অনুযায়ি, জনস্বার্থে যেকোন অ্যাসেট ম্যানেজার কোম্পানির সিইওকে অপসারণ করতে পারে।

বিএসইসির তদন্তে এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেন, বিভিন্ন ফান্ড থেকে প্রাইভেট ইক্যুইটিজে অবৈধ বিনিয়োগ, তার অধীনে পরিচালিত এক ফান্ড থেকে অন্য ফান্ডে অবৈধভাবে বিনিয়োগ, অতিরিক্ত অফিস ও প্রশাসনিক ব্যয় দেখানোর মতো ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। তার কারনে ইউনিটহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। যে কারনে তার বিরুদ্ধে দ্রতু ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের চাহিদা বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, রিয়াজ ইসলামের এসব অবৈধ কর্মকান্ডের জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইনের ৩১(৩) ধারা অনুযায়ি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি তাকে অপসারণে দ্রুত পদক্ষে নিতে দায়বদ্ধ। যদি বিএসইসি এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, তাহলে কোম্পানিটির আমেরিকার শেয়ারহোল্ডারেরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন আইনজীবীকে। তবে এর আগেই বিএসইসি রেগুলেটর হিসেবে বাজারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহন করবে বলে নোটিশে আশা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে লিগ্যাল নোটিশের বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

এ বিষয়ে জানতে রিয়াজ ইসলামের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

বিজনেস আওয়ার/২৫ মার্চ, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

One thought on “এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলামকে অপসারণে বিএসইসিকে লিগ্যাল নোটিশ

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলামকে অপসারণে বিএসইসিকে লিগ্যাল নোটিশ

পোস্ট হয়েছে : ০৬:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : নানা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) রিয়াজ ইসলামকে দ্রুত অপসারনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাগরুব কবির। তার বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ড ও ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থে এই অপসারন চাওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৪ মার্চ) এলআর গ্লোবালের আমেরিকার শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিভাগের দায়িত্বে থাকা কমিশনার ড. মিজানুর রহমানের কাছে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

এর আগে রিয়াজ ইসলামের কর্মকান্ডে নাখোশ হয়ে তার অধীনে পরিচালিত ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও গ্রীণ ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড অন্য অ্যাসেট ম্যানেজারের কাছে হস্তান্তরে ইউনিটহোল্ডাররা সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও গ্রীণ ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটহোল্ডাররা আইনের মধ্য থেকেই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ থেকে রক্ষা পেতে রিয়াজ ইসলাম কয়েক দফায় খোড়াঁ যুক্তিতে মামলা করলেও আদালতে তা ধোপে টিকেনি। কিন্তু ফান্ড দুটির দায়িত্ব হস্তান্তরে বর্তমানে বাধাঁ হয়ে দাড়াঁয় কমিশন। শুরুতে বর্তমান কমিশনের এক কমিশনার রিয়াজ ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিলেও তিনি এখন বিপক্ষে। এখন রিয়াজ ইসলামের পক্ষে আরেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।

কমিশনের এই টানাপোড়েনের মধ্যে হতাশ হয়ে অবশেষে পিছু হটে ইউনিটহোল্ডাররা। তারা কমিশনকে জানিয়ে দেয়, আপনাদের যেটা ভালো মনে হয়, সেটাই করেন। আমরা আর এ নিয়ে ঝামেলার মধ্যে থাকতে চাই না।

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ৪৭.৭০ শতাংশের মালিক আমেরিকার প্রাইভেট বিনিয়োগকারী কোম্পানি এলআর ম্যানেজারস ইনভেস্টমেন্টস এলপি। বাকি ৫২.৩০ শতাংশের মালিক ও বর্তমান প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) রিয়াজ ইসলাম। এই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ৬টি ক্লোজড-এন্ড বা মেয়াদি ফান্ডের ১ হাজার ৫২ কোটি টাকার সম্পদ পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু রিয়াজ ইসলামের অনৈতিক বা অবৈধ কর্মকান্ডের কারনে কোম্পানিটি সমালোচনার মুখে।

রিয়াজ ইসলাম সিকিউরিটিজ আইন ছাড়াও অন্যান্য অনিয়ম করেছে। সে শুধুমাত্র সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ ভঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি ফান্ড আত্মসাৎ, অবৈধ বিনিয়োগ, মিথ্যা স্টেটমেন্ট দাখিল ও ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থবিরোধী অন্যান্য কার্যক্রম করে আসছেন। কিন্তু তারপরেও তার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে চিঠি দিয়ে কোন জবাব বা প্রতিকার পাওয়া যায়নি নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন…..
কাউকে তোয়াক্কা করছে না এলআর গ্লোবাল
এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলামের কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন বিদেশী মালিকরা

নোটিশে বলা হয়েছে, রিয়াজ ইসলাম ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে অননুমোদিত প্রাইভেট ইক্যুইটিজে বিনিয়োগ করেছে। এর মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ ভঙ্গ করা হয়েছে। এছাড়া ওই বিনিয়োগ মিথ্যা মূল্যায়িত (ভ্যালুয়েশন) তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এমনকি ট্রাস্টিও দুটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সঠিক মূল্য শূন্য বলে দাবি করেছে। তারপরেও এ জাতীয় অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কমিশন কোন হস্তক্ষেপ করছে না।

এই রিয়াজ ইসলাম অযোগ্য ও অবৈধ ব্যয়ের মাধ্যমে কোম্পানি পরিচালনা করছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ ভঙ্গ করেছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যয়ের বিষয়ে অনেক অভিযোগ উঠেছে। যদিও ৪৭.৭০ শতাংশ শেয়ারধারন করে কোন ধরনের লভ্যাংশ পাচ্ছে না আমেরিকার শেয়ারহোল্ডার। অথচ কোম্পানিটি থেকে প্রতিবছর লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে ৬ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ অনুযায়ি নিষিদ্ধ।

নোটিশে বলা হয়েছে, বিএসইসির তদন্ত কমিটিও রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ডকুমেন্টসের ভিত্তিতে অননুমোদিত প্রাইভেট ইক্যুইটিজে অবৈধ বিনিয়োগের প্রমাণ পেয়েছে। যে কমিটি গত বছরের ৩ নভেম্বর রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তারা রিয়াজ ইসলামের নেতৃত্বে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ১৭(এ) ও ১৮ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ডস) রুলস ২০০১ এর ৩৩(৭) ও ৫৫ ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে ২৬ জুন বিএসইসি কোম্পানিটিকে একইধরনের অবৈধ কর্মকান্ডের জন্য ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। সে ওই সময় বিভিন্ন ফান্ডস থেকে প্রাইভেট ইক্যুইটিজে অবৈধ বিনিয়োগ, এক ফান্ড থেকে অন্য ফান্ডে অবৈধভাবে বিনিয়োগ এবং অতিরিক্ত অফিস ও প্রশাসনিক ব্যয় দেখিয়েছিল।

সরকার শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রন, এই বাজারের অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা, গুজব নিয়ন্ত্রন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ন্ত্রন এবং ইনসাইডার ট্রেডিং থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতে বিএসইসি গঠন করেছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা অনুযায়ি, শেয়ারবাজারের অবৈধ কর্মকান্ড শুধুমাত্র তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বের করাই বিএসইসির কাজ না, একইসঙ্গে বাজারের স্বার্থে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই যে কারো যেকোন ধরনের নিষিদ্ধ কাজের ক্ষেত্রে বিএসইসির পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কমিশন মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইনের ৩১(৩) অনুযায়ি, জনস্বার্থে যেকোন অ্যাসেট ম্যানেজার কোম্পানির সিইওকে অপসারণ করতে পারে।

বিএসইসির তদন্তে এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেন, বিভিন্ন ফান্ড থেকে প্রাইভেট ইক্যুইটিজে অবৈধ বিনিয়োগ, তার অধীনে পরিচালিত এক ফান্ড থেকে অন্য ফান্ডে অবৈধভাবে বিনিয়োগ, অতিরিক্ত অফিস ও প্রশাসনিক ব্যয় দেখানোর মতো ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। তার কারনে ইউনিটহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। যে কারনে তার বিরুদ্ধে দ্রতু ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের চাহিদা বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, রিয়াজ ইসলামের এসব অবৈধ কর্মকান্ডের জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইনের ৩১(৩) ধারা অনুযায়ি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি তাকে অপসারণে দ্রুত পদক্ষে নিতে দায়বদ্ধ। যদি বিএসইসি এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, তাহলে কোম্পানিটির আমেরিকার শেয়ারহোল্ডারেরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন আইনজীবীকে। তবে এর আগেই বিএসইসি রেগুলেটর হিসেবে বাজারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহন করবে বলে নোটিশে আশা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে লিগ্যাল নোটিশের বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

এ বিষয়ে জানতে রিয়াজ ইসলামের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

বিজনেস আওয়ার/২৫ মার্চ, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: